যে কোনো নতুন সৃষ্টির প্রাক্কালে অনেক ইতিহাস সংঘটিত হয়। তেমনি আজকের হাজী সেলিম ডিগ্রি কলেজের সৃষ্টির উষালগ্নের কিছু গল্প, ইতিহাস আছে, যা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকেরা মনের মধ্যে এখনো লালন করে চলেছেন। আর এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের নতুনরা জানেন না। তাই প্রত্যেকটি ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকা উচিৎ। সৃষ্টির পিছনের ইতিহাস ভুলে যাবার মতো স্বার্থপরতা আর নেই।
প্রথমে যার কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি তিনি হচ্ছেন এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মরহুম আ ফ ম আজিজ উল হক । তৎকালীন তিনি ছিলেন সেন্ট্রাল রোড, ঢাকা আইডিয়াল কলেজের রসায়নের অধ্যাপক।
নিঃসন্তান এই হতভাগ্য শিক্ষক সর্বপ্রথম কলেজ তৈরির চিন্তা লালন করেন। তার এই সুপ্ত চিন্তাকে রূপদান করে কতিপয় কিছু উৎসাহী কিছু তরুন ব্যক্তিত্ব এবং আ ফ ম আজিজ উল হক স্যারের ভাই আমিনুল ইসলাম, কামাল ভাই এবং বর্তমান কর্মরত হিসাবরক্ষক জলিল ভাই কে নিয়ে গ্লিম্পস পত্রিকার অফিস কক্ষে এর কার্যক্রম শুরু করেন। পরিশেষ সব চিন্তা বুদ্ধি ঠিক করে আজিমপুর দায়রা শরীফের নিকটবর্তী স্থানে 115 নং বিল্ডিংটি মাসিক চুক্তিতে ভাড়া করে মেট্রোপলিস মহিলা কলেজ নাম দিয়ে চূড়ান্তভাবে কলেজে ছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম চালূ করেন। এই সময় একঝাক তরুন তরুণী শিক্ষক এবং কর্মচারীর আর্থিক অনুদানের ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা হয়। অ ফ ম আজিজ উল হক আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মেট্রোপলিস কলেজের প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন।
মেট্রোপলিস কলেজটি 1990 সালে সর্বপ্রথম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি কলেজের স্বীকৃতি এবং ভর্তির অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে মাউশির একাদশ,দ্বাদশ শ্রেণীতে ছাত্রী ভর্তির অনুমোদন লাভ করে।
প্রচুর ছাত্রী এ সময় ভর্তি হয়ে জমজমাট হয়ে উঠে। চারিদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। 1993 সালে কলেজটি প্রথম এমপিও ভূক্তি লাভ করে। এই বছরই একজন ছাত্রী 17তম বোর্ড স্ট্যান্ড করে।
এই প্রতিষ্ঠানে এত ছাত্রী ভর্তি হয় যে কলেজে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। এর কয়েক বছরের মধ্যে সরকারী অনুদানে 5তলা বিল্ডিং তৈরির পারমিশন পায়। এই সময় নির্মান কাজ চলতে থাকে এবং আজিম পুরের অন্য একটি বিল্ডিং ভাড়া করে অস্থায়ীভাবে কলেজের ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হয়।
নির্মান কাজে স্থানীয় কতিপয় অসাধু লোক তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কলেজের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তারা সফলও হন। এ হেন পরিস্থিতিতে তখনকার লালবাগের স্বনামধন্য মাননীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বলিষ্ঠ দানবীর সহায়তায় রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন প্রায় এক বিঘার মত জমি দান করেন। ফলে মেট্রোপলিস মহিলা ডিগ্রি কলেজটি 1997 সালে আজিমপুর থেকে রহমতগঞ্জে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে এলাকার সুবিধার্থে মেট্রোপলিস মহিলা কলেজটিকে মেট্রোপলিস কলেজ রূপান্তরিত করা হয়। এই কলেজটি লালবাগের একমাত্র ডিগ্রি কলেজ। তখন থেকে ছাত্র এবং ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। এরপর সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আন্তরিকতায় কলেজটিকে অনার্স কলেজে রুপদান করার জন্য মেট্রোপলিস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রেজুলেশনে নাম প্রস্তাব করা হয়। যার শিলান্যাস পাথর ফলক এখনো বিদ্যমান আছে।
কালক্রমে এই মেট্রোপলিস কলেজটির নাম পরিবর্তন করে বর্তমান হাজী সেলিম ডিগ্রি কলেজ করা হয় এবং বর্তমান হাজী সেলিম ডিগ্রি কলেজ নামেই পরিচিত। এই কলেজটি বর্তমান বিশাল আকার ধারণ করেছে। সরকারি অনুদানে যথাক্রমে 9 তলা এবং পুরাতন 5 তলা বিল্ডিং নিয়ে গঠিত। এখানে 7টি বিষয়ে বর্তমান অনার্স পড়ানো হয়। এই কলেজটি বর্তমান রহমতগঞ্জ, চকবাজার থানায় অবস্থিত এবং অত্র এলাকার একমাত্র ডিগ্রি কলেজ।